স্বদেশ ডেস্ক:
চট্টগ্রামে ‘অবাঙালি ব্যবসায়ী’ হিসেবে পরিচিত গোত্রেরই একজন সচ্ছল ব্যবসায়ী হুসাইন হায়দার আলী এক সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের গাড়ি, লিফট থেকে শুরু করে বৃহৎ যন্ত্রপাতির একচেটিয়া সরবরাহকারী ছিলেন। এ পরিচয়ে তিনি রাতারাতি চট্টগ্রাম শহরে পরিচিত হয়ে ওঠেন। আমদানি ব্যবসার পাশপাশি আবাসনসহ বিভিন্ন ব্যবসায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। কিন্তু ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এসব ব্যবসা শুরু করলেও তিনি ব্যাংকে নিয়মিত কিস্তি জমা দেননি। ফলে এক সময় বেশিরভাগ ব্যবসাতেই লোকসান গুনতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে গা ঢাকা দেন তিনি। আর বিভিন্ন ব্যাংকে তার দেনার পরিমাণ দাঁড়ায় ২০০ কোটি টাকা।
গত শুক্রবার রাজধানীর ভাটারা থানা পুলিশের সহায়তায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিজ ফ্ল্যাট থেকে হুসাইন হায়দার আলীকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা পুলিশ। দুটি চেক প্রতারণা মামলায় সাজা পাওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। নগরীর লাভলেইনের আবেদিন কলোনিতে তার বাড়ি।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন আমাদের সময়কে বলেন, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত মামলায় হুসাইন হায়দার আলীর সাজা হয়। এসব নথি থানায় আসার পর আমরা তাকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নিই। গোপন সংবাদে জানতে পারি তিনি ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আছেন। তখন পুলিশের একটি দল গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় ১০টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হুসাইন হায়দার আলী জানান, সাজা ভোগ না করার কৌশল হিসেবে গত মার্চ থেকে তিনি বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন।
নগরীর জুবলী রোডে অবস্থিত জুবলী ট্রেডার্স হলো হুসাইন হায়দার আলীর মূল প্রতিষ্ঠান। বিদেশ থেকে আমদানি করা ট্রাক্টর থেকে শুরু করে বিভিন্ন গাড়ি ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির পার্টস বিক্রি ছিল তার মূল ব্যবসা। সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে সখ্যতার সুযোগে তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) আবর্জনাবাহী গাড়ি, ডাম্প ট্রাক, এস্কেবেটর বা খননযন্ত্র ও বিভিন্ন নতুন ভবনে লিফট সরবরাহ করেন অনেকটা একচেটিয়াভাবে। মহিউদ্দিন চৌধুরী টানা ১৭ বছর চসিকের মেয়র ছিলেন। এ পুরো সময় হুসাইন হায়দার আলী জুবলী ট্রেডার্সের নামে এ সরবরাহ কাজ অব্যাহত রাখতে সক্ষম হন। ফলে তরতর করে তার ব্যবসার পরিধিও বাড়তে থাকে। চসিকের মেয়র পদে পরিবর্তন এলে ২০১০ সাল থেকে সেখানে তার ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়। তিনি তখন আবাসনসহ অন্য ব্যবসায় ব্যস্ত হন।
একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই সময় হুসাইন হায়দার আলী ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে মেয়াদি ঋণ ও চলতি মূলধন (সিসি) হিসেবে ২৪ কোটি টাকা নেন। যমুনা ব্যাংক জুবলী রোড শাখা থেকে কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য চলতি মূলধন হিসেবে ১৫ কোটি এবং ইসলামী ব্যাংক থেকে আরও ২০ কোটি টাকা নেন। তবে ব্যাংক ঋণ নিয়ে মূল ব্যবসা বাদ দিয়ে তিনি হঠাৎ ফ্ল্যাট ক্রয়, আবাসন ব্যবসায় বিনিয়োগসহ অন্য ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হন। শুরু করেন বিলাসী জীবনযাপন। ফলে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদে এলে তার দেনার পরিমাণ ২০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয় এ তিন ব্যাংকে। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিতে গেলে তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় চলে যান। এতে তার ব্যবসার অবস্থা আরও খারাপ হয়। তিনি ব্যাংক থেকে পালিয়ে থাকার কৌশল নেন।
যমুনা ব্যাংকের জুবলী রোড শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইউসুফ আমাদের সময়কে বলেন, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা জনগণেরই টাকা। কাজেই এ টাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যত্নবান হওয়ার জন্য ব্যাংক থেকেই ঋণ গ্রহীতাকে উৎসাহিত করা হয়। হুসাইন হায়দার আলী তা না করে এক ব্যবসার টাকা অন্য ব্যবসায় খাটান (ফান্ড ট্রান্সফার)। ফলে অনিবার্যভাবেই তিনি মূল ব্যবসায় লোকসান গুনতে থাকেন।